Header Ads

অজানা অতৃপ্ত


নিজের স্তনে কারো হাতের স্পর্শ পাওয়ায় ঘুম থেকে উঠে যায় ইশা। রাত আনুমানিক ১ টা বাজে৷ নিজের ঘরে একা শুয়ে ছিলো ইশা। তখনই ঘটে এই ঘটনা। পুরো রুম অন্ধকার থাকায় লোকটির মুখ ও শরীর কিছুই ভালো ভাবে দেখতে পারছিল না ইশা। আর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটি যেনো খুবই শান্ত ভাবে ইশার স্তন নিয়ে খেলা করছে। প্রথমে ইশা কিছুটা ইতস্ততবোধ করলেও ধীরে ধীরে যেনো এই স্পর্শটা ইশার খুব ভালো লাগছে। কেমন যেনো পাগল করে তুলছে তাকে। তাই ইশা চাইতেও যেনো বাধা দিতে পারছে না।আসতে আসতে লোকটি ইশার স্তন বাদ ছেড়ে পুরো শরীরে হাত বুলিয়ে দেখতে লাগলো। ইশা যেনো একটু পর পর শিহরিত হয়ে উঠছে।বার বার কেঁপে উঠতে লাগলো।

লোকটি ইশার নিম্নাঙ্গের কাপড় টান দেওয়ায় ইশা বুঝতে পারে লোকটি তার সাথে যৌন সঙ্গম করতে চাচ্ছে। যেই ইশার সাথে সঙ্গম করতে যাবে তখনই ইশা যেনো কিছুটা জ্ঞানে আসতে লাগলো। এতক্ষন সে নিজের জ্ঞান এ না থাকার কারণে তার মনে একবারের জন্য প্রশ্ন উঠেনি এত রাতে একজন পুরুষ কিভাবে তার রুমে আসবে। কয়েকদিন পর ইশার বিয়ে তার বয়ফ্রেন্ড বিপ্লব এর সাথে। বিপ্লব হয়তো মজা করার জন্য তাকে না বলে তাদের বাসায় আসতে পারে। কিন্তু দরজা জানালা তো ভিতর থেকে লাগানো তাহলে এই রুমে বিপ্লব বা অন্য কেউ কেনো আসবে। লোকটি তখনো সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে।

ইশা ভাবলো কে এই লোক। আমার রুমে কি করছে।ইশা এইভেবে তার পিছনে থাকা বেড সুইচ টা অন করে। এবং যেই সামনে তাকায় দেখে যে তার এখন রুম সম্পুর্ন ফাঁকা। কেউ নেই তার রুমে। কিন্তু একটু আগেই যেসব হলো ইশার সাথে সেসব কি ছিলো তাহলে? ভাবতেই যেনো ইশা খুব ভয় পেয়ে যায়। তার শরীর ঘামতে থাকে। এটা এমনিতেই শীতের মৌসুম। ইশার কপাল বেয়ে পানি পড়তে থাকে।সে ভাবল এটা কোনো অশরিরী নয়তো। পাশের রুমেই তার বাবা মা ঘুমিয়ে আছে। চিৎকার দিলে হয়তো এখনই উঠে আসবে।কিন্তু সব চেয়ে বড়ো কথা হচ্ছে এটা যদি আমার বিভ্রান্তি হয়ে থাকে তাহলে সবাই আমাকে নিয়ে উপহাস করবে কেনো না ইশা একজন ডাক্তার। তার কাছে অশরিরী বলতে কিছুই হয় না। আর মাত্র কয়েকদিন পর সে নিজেই নিজের হবু স্বামী বিপ্লবের সাথে একটা ছোট্ট ক্লিনিক খুলতে যাচ্ছে। বিপ্লব নিজেও একজন ডাক্তার। তাদের রিলেশনটা 2 বছর আগে শুরু হয়েছে।যখন তারা মেডিকেলে সেকেন্ড ইয়ার এ পড়ে। ইশা পড়াশুনায় খুবই তৃক্ষ মেধা সম্পন্ন ছিল। কিন্তু ক্লাসের বাহিরে সে কারো সাথে একটা কথাও বলত না। সবসময় যেনো মন মরা হয়ে থাকতো। কিন্তু বিপ্লব মনে মনে ইশা কে খুব ভালোবাসতো। যদিও অনেকবার ইশা বিপ্লব কে রিজেক্ট করে দিয়েছিলো। কিন্তু বিপ্লব ও ছিলো নাছোর বান্দা। ইশার পিছে ফেবিকলের মতো লেগে ছিল। ফলশ্রুতিতে সব গল্পের শেষের মতো একসময় ইশা বিপ্লব এর কাছে পটে যায়।

এদিকে(বর্তমানে) ইশা রুমে কাউকে না পেয়ে কিছুটা হতভম্ব হয়ে যায়। তাই এতক্ষন ভাবনার জগতে ডুবে ছিলো।তার ভাবনার বিচ্ছেদ ঘটে একটা অদ্ভূত রকমের বিড়াল এর আওয়াজ এর মাধ্যমে। ঘাড় ঘুরিয়ে একটু নিচে তাকাতেই দেখলো কালো কুচকুচে রঙের একটা বিড়াল ইশার দিকে তাকিয়ে আছে। বিড়াল টার সারা শরীর প্রচণ্ড কালো হলেও চোখ গুলো যেনো অনেক লাল জলজলা। মনে হচ্ছে তার চোখে আগুন জ্বলছে। একা একটা রুমে এই রকম পরিবেশ যেনো যে কাউকে ভয় পাইয়ে দিবে। ইশাও যেনো এর উর্ধ্বে নয়। তাই তো বাধ্য হয়েই একটা চিৎকার দিলো "মাআআআআআআ" বলে। চিৎকার দিয়েই দরজার দিকে দৌড় দিলো।। দরজা খুলতেই সামনে ওর মা বাবা কে পাওয়ায় দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে ইশা।ইশার মা কি হয়েছে জানতে চাইলে ইশা সবকিছু বলে। ইশার মা বাবা দুইজনই ইশার রুম দেখার জন্য আসে। কিন্তু তারা সেই লোকটি কিংবা সেই বিড়ালটির কোনো টিকে খুজে পায় না। জানালাও লাগানো। তাই তারা এক প্রকার নিশ্চিত হয়ে যায় যে তাদের মেয়ে দুঃস্বপ্ন দেখেছে।

ইশার মা বাবা ইশা কে বুঝিয়ে চলে গেলো। রুমে শুধু বসে রইলো ইশা।চারদিকে আবার নিজের দু চোখ বুলিয়ে নিলো। মন দিয়ে সব কিছু দেখতে লাগলো। ইশা নিজেও বুঝে নিলো যে এটা শুধু তার দুঃস্বপ্ন ছাড়া কিছুই ছিলো না। তাই সে নির্বিঘ্নে আবার শুয়ে পড়লো।

পরের দিন সকালে ইশার ঘুম ভাঙল বিপ্লব এর ফোনে। এটা যেনো এখন রুটিন হয়ে গেছে। রোজ সকালে ইশার ঘুম ভাঙানোর দায়িত্বটা যেনো বিপ্লব নিজেই নিয়েছে।। ইশা পাশে থাকা ফোন টা তুলতেই বিপ্লব বলতে লাগলো

- কি করে আমার জানু টা।

- এইতো বিছানায় শুয়ে শুয়ে চাঁদ দেখি

- এই তোমাদের বাসার ছাদ ফুটো হয়ে গেছে নাকি।? নাহলে বিছানায় বসে চাঁদ কিভাবে দেখো

- আরে বোকা আমি তো মজা করেছি। তাছাড়া এই দিনের বেলায় চাঁদ কোথায় পাবো আমি?

- ওহ তাই তো। হাহাহাহা

- থাক আর হাসতে হবে না। কি বলবে বলো আমার ফ্রেশ হতে হবে

- চলো না আজ আমরা দেখা করি। কতদিন হয়ে গেলো দেখা করি না। শুধু ফোনে কথা বলে সময় পার করে দিই

- কিহ। পরশু দিন ও তো দেখা করলাম। আর আগামীকাল কাল ই তো আমাদের বিয়ে। ওহ বুঝেছি। আবার দুষ্টামি করার শখ জেগেছে বুঝি।

- দেখেছো আমাদের মনের কতো মিল। আমি কি বুঝাতে চেয়েছি তুমি বুঝে ফেলেছ।

- ঠিক আছে আসবো। এখন বাই।

বলেই ইশা ফোনটা কেটে দিলো। ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো যেখানে বিপ্লব আর ইশা রোজ দেখা করে আসছে। ইশা দের কোনো গাড়ি নেই তাই ইশা রিকশা ব্যবহার করছে। পার্কের সামনে নামতেই দেখে বিপ্লব দাঁড়িয়ে আছে। দুই জনে মিলে ভিতরে গিয়ে বসে গল্পগুজব করছে।

হঠাৎ করে ইশা নিজের ভিতর কিছুটা অস্থিরতা অনুভব করতে থাকে। নিজের ভালোবাসার মানুষ, নিজের হবু স্বামীর সাথে সদ্য হাসি খুশি করা মেয়েটা যেনো নিমেষেই কিছুটা অস্থিরতা অনুভব করছে। এই অস্থিরতা কিসের চাইতেও যেনো মনে করতে পারছে না ইশা। বিপ্লব ইশার এই দিক টা খুব ভালো ভাবে লক্ষ করলো। সে কিছুই না বলে শুধু ইশার এমন দশা দেখে যাচ্ছে। হঠাৎ একজন পথ ভিক্ষুক এসে বিপ্লব এর সামনে বলল "স্যার গো কয়ডা টাহা দেন। আজ দুই দিন ধইরা কিছু খাই না"।। বিপ্লব নিজের মানিব্যাগ থেকে ১০০ টাকার একটা একটা নোট বের করে দেয়। কিন্তু এদিকে ইশা সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এই লোকটিকে এক নজরে দেখেই যাচ্ছে। তার যেনো চোখের পাতা পড়ছেই না।মনে হচ্ছে ইশা যেনো এই লোকটিকে কত না দিন ধরে চিনে। ইশা দেখলো সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটির চেহারা হঠাৎ করে খুবই বীভৎস হয়ে গেলো। মনে হচ্ছে মুখের মাংস গুলো যেনো কোনো জীব জন্তু খুবলে খুবলে খেয়েছে। শরীরের চামড়া কুঁচকে গেছে খুব। চোখের কোঠোর যেনো বেরিয়ে গেছে। ইশা আর সহ্য করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে যায়।এবং বিপ্লব এর সামনেই মাটিতে লুটিয়ে পরে। বিপ্লব ভাবলো হয়তো সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ভিক্ষুক কে দেখে ভয় পেয়ে গেছে। তাই বিপ্লব ভিক্ষুকটিকে চলে যেতে বললো

বিপ্লব তাড়াতাড়ি করে ইশা কে তুলে নিজের গাড়িতে শুয়ালো। ইশাদের বাড়িতে নিয়ে যেতেই নিজের মেয়েকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখে ইশার বাবা মা যেনো খুবই চমকে গেলো। কিন্তু বিপ্লব তাদের শান্তনা দেওয়ার জন্য বললো যে ইশা শুধু মাত্র ফ্রাস্টেশন এ পরে জ্ঞান হারিয়েছে। এই বলে বিপ্লব নিজের বাসায় চলে গেলো। কোনো না আগামী কাল ই তাদের বিয়ে। অনেক প্রস্তুতি এখনও বাদ আছে।

পরের দিন দুই পরিবারের মাঝে যেনো খুশির পাহাড় নেমে আসে। আজ ইশা আর বিপ্লবের বিয়ে। বাহিরের সবাই বিপ্লব এর সাথে কথা বলছে আর এদিকে ঘরের ভিতর ইশা বসে আছে। রুমে কেউ নেই। যেখানে ইশার সবচেয়ে বেশি খুশি হওয়ার কথা সেখানের ইশা কিছুটা মন মরা। ধীরে ধীরে বিয়ে খুব ভালো ভাবে সুসম্পন্ন হলো।

ইশা কে বিপ্লবের বাড়িতে আনা হলো। বিপ্লবের ছোটো ভাই বোনেরা সবাই মিলে ইশা কে বাসর ঘরে বসালো । এদিকে বিপ্লব ওর বন্ধুদের সাথে কথা বলছে। বন্ধুদের ধাক্কা আর ধমক খাওয়ার অনেকক্ষন পর বিপ্লব গিয়ে বাসর ঘরে ঢুকলো। বিপ্লব বাসর ঘরে ঢুকেছে দেখে ইশা কিছুটা নরেচরে বসলো।

বিপ্লব খাটে বসে যেই ইশার ঘোমটা সোরালো অমনি চার পাশ টা কেনো জানি কেঁপে উঠলো। মনে হলো তাদের রুমে যেনো ভূমিকম্প হচ্ছে। ইশা আর বিপ্লব যেনো খানিকটা চমকে উঠলো। ইশা ভয় পেয়ে বিপ্লবকে জড়িয়ে ধরলো। বিপ্লব ভাবলো হয়তো বাহিরে চিৎকার চেঁচামেচির জন্য এমন টা হয়েছে। তাই নিজেও ইশাকে জড়িয়ে ধরলো। কিন্তু এবার যা হলো তা কারোই প্রত্যাশা করার মত ছিলো না।বিপ্লব এর ঘরের সব জিনিস পত্র আপ্নাআপনি নরতে লাগলো। রুমের ভিতর প্রচণ্ড বেগে বাতাস বইতে লাগলো। মনে হচ্ছে এই বুঝি তারা দুজনেই উড়ে যাবে।

বাসর ঘরে ইশাকে বিপ্লব জড়িয়ে ধরতেই চারপাশটায় কেমন জানি বাতাস বইতে লাগলো।ভূমিকম্পের মতো রুমটা দুলতে লাগল। ঘরে থাকা আসবাবপত্র গুলো যেনো কাঁপছে। এসব দেখে ইশা সহ্য করতে না পাড়ায় ইশা বিপ্লব কে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে গেলো। বিপ্লব কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছে যে এসব কোনো স্বাভাবিক বিষয় নয়। এর পিছে অবশ্যই কোনো অশরীরির হাত রয়েছে। তাই সে ইশা কে বিছানায় শুয়ে রেখে রুমের এই অবস্থার কারণ খুঁজে বেরোনোর জন্য দাঁড়িয়ে পড়ে। আর অমনি এই কোলাহল পুরনো রুম যেনো ঠান্ডা শান্ত হয়ে যায়। বিপ্লব কিছুটা ঘাবড়ে যায়। কি হচ্ছে এসব। তাই সে ভাবলো ইশা কে একটু ডাকুক যে রুম টা শান্ত হয়ে গিয়েছে। বিপ্লব ইশার গায়ে হাত দিয়ে যেই ডাকতে যাবে অমনি সেই আগের মতো পরিবেশ এর সৃষ্টি হয়ে গেলো রুমে। বিপ্লব এবার ভয়ে কিছুটা পিছে চলে। এবং সে বুঝতে পারে যে ইশাকে স্পর্শ করলেই ওই অশরীরি খেপে রেগে যায়। ইশার কাছে যেতে যেনো বিপ্লব ভয় পাচ্ছে। এদিকে ইশাও অজ্ঞান হয়ে বিছানায় পড়ে আছে। তাই বিপ্লব কোনো উপায়ান্তর না পেয়ে বাহিরে চলে যায়। বিয়ের দিন হওয়ায় সবাই তখনো বাহিরে মজা করছে।।বিপ্লব এর একটা ফ্রেন্ড আছে শাকিল । খুব মেধাবী। যেকোনো রহস্য যেনো তার কাছে অমৃত সাধের মতো। রহস্যের মূল যতক্ষন না পর্যন্ত খুঁজে বের করবে সে যেনো কোনো কাজে মন বসাতে পারে না। বিপ্লব ভাবল শাকিল যদি কেউ তাকে সাহায্য করতে পারে তাহলে সেটা হলো স্বয়ং আল্লাহ এবং শাকিল। কেনো না এই যুগের দরবেশ বাবা কবিরাজ বলতে কিছুই নেই সব ভণ্ড। শাকিল ও বিপ্লবের এর বিয়েতে এসেছে। তাই তাকে খুঁজে পেতে বিপ্লব এর বেশি দেরি হলো না। যেখানে সবাই নাচানাচি করছে সেখানে শাকিল কিছুটা দূরে একটা বেঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে কি যেনো ভাবছে। বিপ্লব গিয়ে শাকিল কে বললো

- শাকিল কি ভাবছিস। সবাই তো খুব আনন্দ করছে। তুই এখানে কেনো?

- জানি তোরা আমার এই রহস্যের প্রতি এত প্রেম দেখে আমাকে নিয়ে উপহাস করিস। তবুও আমি এই রহস্যের কথা বলতে একদম পিছু পিছু পা হবনা। জানি এবারও হাসবি। তবুও বলছি দোস্ত আমি কেনো জানি এখানে কোনো অশরীরির অস্তিত্ব টের পাচ্ছি।

বিপ্লব মনে মনে ভাবছে তার মানে শাকিল সত্যি একজন রহস্যময় মানুষ। নাহলে ও কোনোদিন ও এই অশরীরির কথা জানতে পারতো না। ওর প্রতি বিপ্লবের যেনো অগাধ বিশ্বাস জন্মালো। তাই বিপ্লব শাকিলকে সবকিছু খুলে বললো। শাকিল বললো বিপ্লবকে বললো

- তাহলে আমাদের সর্বপ্রথম জানতে হবে ওই অশরীরি কেনো তোদের কাছে এসেছে আর কি চায় তোদের কাছে। যদি এসব বিষয়ে জানতে পারি তাহলে ওকে হারাতে আমার খুব সহজ হবে।

- কিন্তু ওর ব্যাপারে জানবো কি করে?

- শুন তুই বললি না তুই ইশা ভাবীকে রোমাঞ্চ এর জন্য স্পর্শ করলেই ও ক্ষেপে উঠে।

- হুম তাই তো দেখলাম।

- শোন এখন তুই ইশা ভাবীর সাথে রোমাঞ্চ শুরু করবি আর আমি পাশের রুমে থাকবো যেই ভিতরে ওই অশরীরি চলে আসবে তুই কিছু একটা দিয়ে শব্দ করবি আর আমি চলে যাব ভিতরে। আর ওকে কিছুক্ষণের জন্য আটকে ওর ফিরে আসার কারণ জানবো।

- ভাই তাড়াতাড়ি আশিস নাহলে কিন্তু ভাই আমি বউয়ের আদর পাওয়ার আগেই উপরে চলে যাবো। 

- তুই আমার উপর বিশ্বাস রাখ তোর কিছুই হবে না। এখন তাড়াতাড়ি চল ভোর হওয়ার আর কিছুক্ষণ বাকি।

রাত প্রায় ৪ টা বাজে। সবাই এখন হৈচৈ করা বাদ দিয়ে রুমে হয়তো শুয়ে পড়েছে এখন সব কিছু ঠান্ডা। এখন কাজটা খুব সহজ হবে। বিপ্লব আর শাকিল চলে গেলো রুমের ভিতর। শাকিল পাশের রুমে লুকিয়ে পড়ে। এদিকে বিপ্লব গিয়ে দেখে ইশা এখনো অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। তাই ওকে কিছুক্ষণ ডাকাডাকির পরেও না উঠার কারণে পাশের ডেসিং টেবিল এর উপর থাকার পানির গ্লাস টা হাতে নিয়ে ইশার মুখের উপর কয়েক ফোটা পানি ছিটিয়ে দিতেই ইশা উঠে পড়ে। বিপ্লব কিছু না ভেবেই ইশার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। ইশাও বিপ্লব কে কোনো বাঁধা না দিয়ে নিজের বাহুডরে জড়িয়ে নেয়। দুজনেই যেনো বার বার শিহরিত হচ্ছিলো। ঠিক তখনই আগের মতো রুমের বায়ু চাপ বাড়তে লাগলো। গরম বাতাস চারপাশে বইতে লাগলো। সব জিনিস পত্র গুলো দুলতে লাগলো। ইশা আবারো ভয় পেয়ে গেলো। কিন্তু বিপ্লব কিছুটা শক্ত মনোবল নিয়ে ইশা কে জড়িয়ে ধরে আছে। কারণ তার সত্যটা জানতেই হবে। হঠাৎ ইশা এবং বিপ্লব রুমে কারো রাগে ফুসফুস করার আওয়াজ শুনতে পেলো। বিপ্লব তবুও ইশাকে জড়িয়ে ধরে আছে। হঠাৎ চারপাশ টা কেমন জানি শান্ত হয়ে গেলো। জিনিস পত্র গুলো কাঁপাকাপি করা বন্ধ হয়ে গেলো। গরম বাতাস এর পরিত্রাণ হতে লাগলে লাগলো। বিপ্লব কিছু বোঝার আগেই ইশা আবার বিপ্লব কে জড়িয়ে ধরলো। বিপ্লব ভাবলো হয়তো ইশাও তাকে ভালোবেসে জড়িয়ে ধরেছে। কিন্তু আস্তে আস্তে যখন নিজের বুকে চাপ বাড়তে লাগলো তখন বিপ্লব বুঝতে পারলো যে এটা কোনো সাধারণ মানুষের শক্তি দ্বারা হবে না। মনে হচ্ছে ইশা বিপ্লব এর বুকের সকল হাড় ভেঙে ফেলবে। বিপ্লব এর বুঝতে বাকি রইলো না যে সেই অশরীরি এখন ইশার গায়ে। বিপ্লব চাইতেও যেনো নিজেকে ছাড়াতে পারছে না। এদিকে বিপ্লব এর দম যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। অনেক চেষ্টার পর বিপ্লব নিজেকে ছাড়াতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু যেই ছাড়া পেয়ে পাশের রুমে দৌড় দিবে তার আগেই ইশা বিপ্লব কে এমন জোরে একটা ধাক্কা দেয় যে বিপ্লব সোজা উড়ে দেয়ালের সাথে আঘাত পায়। বিপ্লব এর মাথা ফেটে রক্ত পড়তে থাকে। প্রচণ্ড রক্ত বের হওয়ায় বিপ্লব বুঝতে পারে সে অজ্ঞান হয়ে যাবে। কিন্তু পাশের রুমে থাকা শাকিল এর কথা যেনো এতক্ষন মনেই ছিলো না। তাই অনেক কষ্টে দাঁড়িয়ে পাশে থাকা গ্লাস টা সজোরে আঘাত দিয়ে ভেঙে ফেলে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। আর সেই শব্দে পাশের রুমে থাকা শাকিল দৌড়ে এই রুমে চলে আসে। শাকিল এসে দেখে যে বিপ্লব মাটিতে পড়ে আছে। তবে উঠার বেশ চেষ্টা করছে। সে বিপ্লব এর দিকে আর দৃষ্টি না দিয়ে ইশার দিকে তাকাতেই বুঝে যে সেই অশরীরি এখন ইশার ভিতর বিরাজ করছে। শাকিল মনে মনে কিছু শব্দ উচ্চারণ করার সাথে সাথে যেনো ইশা চিৎকার দেয়। আর বিপ্লব শাকিল কে বলতে থাকে

- তুই আমাকে আটকাতে পারবি না আমায়। আমি ওকে মেরে ফেলবই। যে আমার ইশার কে পেতে চাইবে তাকেই আমি মেরে ফেলব। ইশা শুধু আমার।

- তুমি এখানে কেনো এসেছ? আর কেই বা তুমি। 

হঠাৎ এর মাঝেই ফজরের আজান সবার কানে ভেসে উঠলো। ইশা কেমন জানি একটা ঝাকুনি দিয়ে মেঝের উপর অজ্ঞান হয়ে লুটিয়ে পড়ল। বিপ্লব অনেক কষ্টের পর উঠে দাঁড়ায়। এবং ইশা কে তুলে বিছানায় শুয়ে দেয়। নিজের মাথায় লেগে থাকা রক্ত পরিষ্কার করে যাতে অন্য কেউ এসব এর ব্যাপার না জানতে পারে। বিপ্লব এবং শাকিল দুইজনই বাহিরে আসে। বিপ্লব শাকিল কে বললো

- কিরে কিছু জানতে পারলি

- যত টুকু জানতে পারলাম যে ওই অশরীরির সাথে ইশার কোনো অতীতের সম্পর্ক অবশ্যই আছে। তোর আগে ওটা জানতে হবে নাহলে ওই অশরীরি কে হারানো অসম্ভব।

- ওর সাথে ইশার আবার পুরোনো অতীত কিভাবে থাকবে। 

- সেটাই তো তোর জানতে হবে। আর শুন আজকের ভিতর যদি ওকে হারাতে না পারি তাহলে হয়তো তুই ইশা কে আর কোনোদিন নাও পেতে পারিস।

এই বলে শাকিল চলে গেলো।। বিপ্লব ভাবতে লাগলো কি এমন অতীত থাকতে পারে ইশার। ইশার অতীত তো শুধু আমি ছিলাম। যাইহোক সেটা জানতেই হবে আমার। বিপ্লব চলে গেলো ইশার কাছে। দেখে ইশা জেগে উঠেছে।বিপ্লব কিছু বলার আগেই ইশা বিপ্লব কে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলো। আর বলতে লাগলো। 

- এসব কি হচ্ছে বিপ্লব। আর কেনোই বা হচ্ছে আমার খুব ভয় লাগছে।

- ইশা তোমার জীবনে এমন কি কোনো অদ্ভূত ঘটনা ঘটেছিল যেটার জন্য তোমাকে বা অন্যকে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে।

- না। এমন কিছু তো হয়নি।

- ইশা মনে করার চেষ্টা করো। নাহলে অনেক বড় প্রবলেম হয়ে যাবে

- কিছু ঘটেনি। তবে হ্যাঁ একটা ছেলে আমাকে খুব ভালো বাসতো। কিন্তু

- কিন্তু কি ইশা। বলো। 

- আমি যখন কলেজে ভর্তি হই। তখন নতুন একটা শহরে শিফট হয়ে যাই সবাই মিলে। আমি যখন স্কুলে যেতাম একটা ছেলে রোজ আমাকে একটা ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখত। প্রথম কয়েকদিন আমি বিষয়টা কে খুব স্বাভাবিক ভাবে নেই। কিন্তু যখন এসব রোজ হচ্ছিল তখন আমি বুঝতে পারি যে ছেলেটা আমাকে পছন্দ করে।। আমিও কোনো প্রকার কথা না বলে চলে যেতাম যেতাম। কিন্তু একদিন যখন আমি বাসায় আসতে ছিলাম তখন ওই ছেলেটা আমাকে প্রপোজ করে বসে তখন আমি ওকে রাগের বসে একটা থাপ্পড় মেরে বসি। আর বলি যে কোনোদিন যেনো আমার সামনে না আসে। সেদিন এর পর থেকে আমি যখন কলেজে যেতাম তখন থেকে ওই ছেলেটাকে দেখতাম না। আসতে আসতে যখন দিন অতিবাহিত হতে লাগলো। তখন কেনো জানি আমার মনে কিছু টা আশঙ্কা জাগতে লাগলো। তার কয়েকদিন পর আমি ওর এক বন্ধু কে যখন জিজ্ঞেস করি তখন ও বলে যে ওই ছেলে টা নাকি আত্মহত্যা করেছে। এই ঘটনা শুনার পর যেনো আমি মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ি।একজন অপরিচিত । কোনো কাজেই যেনো মন বসাতে পারি না।সবসময় মনমরা হয়ে থাকতাম আর তখনি তোমার সাথে আমার দেখা হয়।

- হুমম এবার বুঝতে পারলাম। ওই ছেলেটা তার ভালবাসার টানে আবার ফিরে এসেছে শুধু তোমাকে নিয়ে যেতে। কিন্তু আমি এটা হতে দিবো না।

বিপ্লব শাকিল কে ফোন দিয়ে সবকিছু খুলে বললো। শাকিল বললো তোরা দাড়া আমি এখনই আসছি।কিছুক্ষণের মধ্যে শাকিল উপস্থিত হল। এসেই বললো

- শোন আমাদের যদি ওকে একেবারে তারাতে হয় তাহলে ওই ব্রিজ টার কাছে যেতে হবে। যেখানে ও সবচেয়ে বেশি দুর্বল ছিলো ইশার প্রতি। তার আগে বলছি তোরা দুইজন এই দুইটা তাবিজ 1হাতে বেঁধে নাও। যাই হোক এটা হাত থেকে খুলবে না। এখনি আমরা ওখানে যাবো। চলো।সবাই মিলে ফ্যামিলি কার করে সেই জায়গায় উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো। যেখানে ইশা আগে থাকতো। যেতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেলো। দিনের বেলা থাকায় তাড়াতাড়ি করে যেতে পেরেছে সবাই। কিন্তু যেই আসতে আসতে রাত ঘনিয়ে আসলো ঠিক তখনই একটা গাড়ি যেনো এসে বিপ্লব দের গাড়িতে ধাক্কা মারলো। এতে ইশা, বিপ্লব এবং শাকিল সবাই মিলে একটা খাদে পড়ে গেলো। শাকিল প্রচণ্ড ব্যথা পাওয়ায় অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরনের কারণে অজ্ঞান হয়ে গেলো। কিন্তু বিপ্লব কিছু টা জ্ঞানে থাকায় ও ইশাকে গাড়ি থেকে বের করে উপরে আসতে লাগলো।

রাত প্রায় 8 টা বাজে। সম্পূর্ন রাস্তা ফাঁকা। তার উপর জনমানবহীন এলাকা। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। বিপ্লব ইশাকে নিয়ে রাস্তার উপর উঠে আসে। আর তখনি কেমন জানি চারদিকে বাতাস বইতে থাকে। ঝড়ের আবির্ভাব এর মতো। চারদিকে বাতাস শো শো শব্দ করছে। হঠাৎ বিপ্লব সামনে কারো উপস্থিতি টের পায়। সামনে একজন যুবক দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখের দিকে তাকাতেই ভয়ে আতকে উঠে বিপ্লব। ভয়ে যেনো বিপ্লব এর গলা শুকিয়ে যায়। কি বীভৎস তার চেহারা। চোখের সামনে এই রকম দৃশ্য কেউ প্রত্যাশা করবে না।

হঠাৎ অশরীরি টি বিপ্লবের গলা চেপে ধরলো। এবং ভূমি থেকে শূন্যে ভাসালো। বিপ্লব বুঝতে পারছে না শাকিল এর তাবিজ হাতে থাকা সত্বেও কিভাবে এই অশরীরি তাকে স্পর্শ করতে পারছে। বিপ্লব নিজের হাতের দিকে তাকাতেই বুঝতে পারে যে সেই তাবীজ টি আর তার হাতে নেই। সেই গাড়ি ধাক্কা খাওয়ার সময় সেটি হাত থেকে পড়ে গেছে।হঠাৎ অশরীরিটির হাতের নখ গুলো অনেক লম্বা ধারালো আকার ধারণ করলো। বিপ্লব বুঝতে পারলো তার মৃত্যু অনিবার্য।। অশরীরি যেই নিজের হাতের নখ বিপ্লব এর বুকে ঢুকিয়ে দিবে তার আগেই হঠাৎ ইশা উঠে এসে সেই অশরীরির ও বিপ্লব এর সামনে দাঁড়ায়।ইশা খুবই কান্না জড়িত কন্ঠে বলে

- তুমি দয়া করো। আমার স্বামী কে মেরো না। ও তোমার কি বা ক্ষতি করেছে। তোমাকে তো থাপ্পড় আমি দিয়েছিলাম যেই কষ্টে তুমি আত্মহত্যা করেছো শাস্তি দিলে তুমি আমাকে দেও। কিন্তু তুমি যেটা চাচ্ছো সেটা সম্ভব না। তুমি মরে গেছ। এখন একজন জীবিত মানুষ এর সাথে একজন আত্মার মিলন কোনোদিন ও সম্ভব নয়।

এতক্ষন পর যেনো সেই সেই অশরীরি নিজের ভয়ঙ্কর চেহারা পাল্টে কিছু টা স্বাভাবিক রূপ নিয়ে শান্ত গলায় বললো

- আমি তো তোমাকে ভালোবাসতাম ইশা। ভেবেছিলাম তোমাকেই জীবন সাথী করব। সেদিন তোমাকে অনেক সাহস করে নিজের মনের কথা জানিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম তুমি রাজি হয়ে যাবে। আর সেদিন আমার খুশির ঠিকানা থাকবে না। কিন্তু তুমি যখন আমায় থাপ্পড় মারলে তখনো আমি কোনো কষ্ট পাইনি। কিন্তু যখন বললে তোমার সামনে যেনো কোনোদিন না যাই। তখন আমি বুঝলাম তোমায় রোজ একবার করে দেখা ছাড়া আমার বেঁচে থাকা অসম্ভব। কিন্তু দেখো তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা এতই গভীর ছিল যে আমি মরার পর ও তোমার ভালোবাসার টানে ছুটে এসে ছিলাম। কিন্তু তুমি যখন চাচ্ছো তখন চলে যাচ্ছি। তোমাদের মাঝে আর আসব না। ভালো থেকো তোমরা।

বলতেই সেই অশরীরি যেনো হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে লাগলো। বালির ধুলিকনার মতো সেই জায়গায় বাতাসে উড়তে লাগলো। ইশা বিপ্লব কে টেনে তুললো। দুইজন দুইজনকে জড়িয়ে ধরলো। আকাশের দিকে আনমনে তাকিয়ে আছে দুইজন। দোয়া করছে সেই আত্মার মাগফিরাত এর জন্য। আর মুক্তি পেয়ে গেলো একটা ভালোবাসায় পাগল হওয়ায আত্মা।। যে ভালোবাসার টানে মরার পরেও ছুটে এসেছিল নিজের ভালোবাসার মানুষের কাছে।

এমন সুন্দর সুন্দর গল্প পড়তে চাইলে সাথে থাকুন ।




কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.